ইসলাম : ইসলাম আল্লাহর মনোনীত একমাত্র জীবনবিধান। দুনিয়া ও পরকালীন মুক্তির নির্দেশনা রয়েছে ইসলামে। যেহেতু ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান, এর মধ্যে আছে মানবজীবনের প্রয়োজনীয় সব নির্দেশনা। মানুষের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবন থেকে নিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার বিধিবিধান, আন্তঃরাষ্ট্রীয় সম্পর্ক, কূটনীতি থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার বিষয়েও ইসলামের নির্দেশনা সুস্পষ্ট।
ইসলামী রাষ্ট্রের নিরাপত্তা : ইসলামী রাষ্ট্রে নিরাপত্তার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। এই রাষ্ট্রের নিরাপত্তার বিষয়টি শুধু বৈদেশিক আক্রমণের দিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং অভ্যন্তরীণ দিক থেকেও এর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ইসলামী রাষ্ট্রে সমাজ কীভাবে নিরাপদ থাকবে, এর নিরাপত্তা কীভাবে বিধান করতে হবে তার সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে কোরআন ও হাদিসে। আর বাইরের শত্রুর আক্রমণ প্রতিহত করে ইসলামী রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিধানের নির্দেশনাও আছে ইসলামে। মুসলমানদের মান-ইজ্জত, ধন-সম্পদ এবং রক্ত যাতে নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে নিপতিত না হয়, সে জন্য মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) উদাত্ত কণ্ঠে ঘোষণা করলেন, ‘মুসলমান মুসলমানের ভাই। প্রত্যেক মুসলমানের মান, ইজ্জত, ধন-সম্পদ ও রক্ত অন্য মুসলমানের ওপর হারাম।’ (মুসলিম)। অর্থাত্ মানুষের সামাজিক বা রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে এমন কাজকে নবীজি কঠোরভাবে হারাম ঘোষণা করেছেন।
অর্থনৈতিক নিরাপত্তার বিষয়টিও ইসলামে গুরুত্বসহকারে বিবেচিত হয়েছে। এ জন্য যাকাত, ফিতরা ও উশরের বিধান চালু করা হয়েছে। আর এ নিরাপত্তার বিধানগুলো নিশ্চিত করার জন্য যাকাত প্রদানে আপত্তিকারী কিংবা অস্বীকারকারীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা পর্যন্ত করা হয়েছে। মহাগ্রন্থ আল কুরআনে শত্রুর আক্রমণ প্রতিহত করা এবং দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার নির্দেশ জারি করা হয়েছে। কুরআনে বলা হয়েছে, ‘যে সব লোক তোমাদের ওপর হামলা করেছে, তাদের সাথে যুদ্ধ কর, এ যুদ্ধ হবে খোদার পথে।’ শত্রুর আক্রমণকে মোকাবেলা করার জন্য কুরআনে আরো নির্দেশ এসেছে। শত্রুর আক্রমণ প্রতিহত করে ইসলামী রাষ্ট্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কাজকে উত্সাহিত করার জন্য মহানবী (সা) ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহর পথে একদিন সীমান্ত পাহারা দেয়া দুনিয়া ও এর ওপরে অবস্থিত সব জিনিস থেকেও উত্তম।’
ইসলামী রাষ্ট্রের নিরাপত্তা তথা রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার কৌশল সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো :
আদর্শিক শক্তি : কোনো আদর্শবাদী রাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বা নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে তার আদর্শিক শক্তি। এর নমুনা আমরা দেখেছি রাসুলে করীম (সা.) ও তার সাহাবিদের জীবনে এবং পরবর্তীকালে ইসলামের ইতিহাসে। আমরা এর জলজ্যান্ত উদাহরণ পাই বদর, খন্দক ও ইয়ারমুকসহ অসংখ্য জিহাদে। ইসলামের প্রথম জিহাদ বদরে ঈমানি শক্তিতে বলীয়ান মাত্র ৩১৩ জন মুসলমান বিপুল অস্ত্র ও অন্যান্য শক্তিতে বলীয়ান ১০০০ কাফিরের বিরুদ্ধে সহজে বিজয় লাভ করে।
কোরআন মজিদ উল্লেখ করেছে, ‘উচ্চমানের ঈমান ও ইয়াকিন এবং পরিপূর্ণ সবর ও দৃঢ়তা যদি থাকে তাহলে তারা দশগুণ শক্তির ওপরে বিজয় লাভ করতে সক্ষম হবে।’ আমাদের কাঙ্ক্ষিত রাষ্ট্রের নিরাপত্তায় আজও আদর্শই মূল শক্তি। অস্ত্র, মারণাস্ত্র ও সমরশক্তি সহযোগী মাত্র।
নৈতিক ও মানসিক শক্তি : শত্রুকে মোকাবিলা করার পরবর্তী গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয় তা হলো মানসিক বল ও নৈতিক শক্তি। মানসিক ও নৈতিক শক্তিতে দুর্বল বিশাল সৈন্যবাহিনী তার বিপুল রণসম্ভারসহ পরাজয়বরণ করেছে তার নজির পৃথিবীর ইতিহাসে যথেষ্ট রয়েছে।
ভূরি ভূরি উদাহরণ দেয়া যায়, কীভাবে আদর্শ ও নৈতিকতা সহজে বিজয় লাভ করতে পারে। এ জন্য ইসলাম মানসিক মনোবলকে, শত্রুকে মোকাবিলা করার অন্যতম বলে গুরুত্ব দিয়েছে। এ ব্যাপারে কোরআন মাজিদে বলা হয়েছে, ‘তোমরা সাহসহীন হইও না, ভারাক্রান্ত হইও না, তোমরাই বিজয়ী হবে, যদি তোমরা ঈমান ও দৃঢ়প্রত্যয়ের অধিকারী হও।’ মানসিক দুর্বলতা যে পরাজয়ের মূল কারণ তা উল্লেখ করে কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তোমরা ঈমান ও দৃঢ়প্রত্যয়সম্পন্ন একশ’ লোক হলে কাফিরদের এক সহস্র ব্যক্তির ওপর জয়ী হতে পারবে। কেননা, কাফিরদের জ্ঞান-বুদ্ধি বলে কিছুই নেই।’
দৃঢ় ঐক্য ও শৃঙ্খলা : যুদ্ধে জয় এবং শত্রুর মোকাবিলায় ঐক্য ও শৃঙ্খলা যে কত জরুরি তা ওহুদ যুদ্ধের ঘটনা থকে মুসলমানরা শিক্ষা নিতে পারে। ইসলাম প্রতিষ্ঠা ও ইসলামী রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিধানের ক্ষেত্রে ঐক্য ও শৃঙ্খলার যে কোনো বিকল্প নেই তা সহজেই অনুমেয়। আজ গোটা বিশ্বে ও বিভিন্ন দেশে মুসলমানদের বিপর্যয়, পরাজয় এবং পরাধীনতার পেছনে আমরা তাদের মধ্যকার অনৈক্য ও বিশৃঙ্খলাই লক্ষ্য করি।
মুসলমানদের ঐক্যের ব্যাপারে কোরআন মাজিদে বলা হয়েছে, ‘হে ঈমানদার লোকেরা! তোমরা যখন শত্রুবাহিনীর মুখোমুখি হবে তখন অবশ্যই দৃঢ় প্রতিষ্ঠিত হবে। আল্লাহকে খুব বেশি করে স্মরণ করবে। আশা করা যায়, তোমরা সাফল্যমণ্ডিত হবে। আর তোমরা আনুগত্য করবে আল্লাহ এবং তার রাসুলের, আর তোমরা পরস্পরের অনৈক্য ঝগড়া-বিবাদে মশগুল হবে না। তা যদি হও, তবে তোমরা ভীরু ও কাপুরুষ হয়ে যাবে। তোমাদের শক্তি ও উন্নতি হাওয়ায় উড়ে যাবে। তোমরা অবশ্যই ধৈর্যধারণ করবে। আল্লাহও ধৈর্যশীলদের সঙ্গেই আছেন।
বৈষয়িক ও বস্তুগত শক্তি : যে কোনো রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও বহিঃশত্রুর আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য তার আদর্শিক শক্তি এবং মনোবল ও মানসিক দৃঢ়তা যেমন প্রয়োজন তেমনি প্রয়োজন বস্তুগত শক্তিরও। যদিও এটা কখনোই মুখ্য বিষয় বলে বিবেচিত হয়নি। ইসলামে এই বৈষয়িক প্রাধান্যকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হয়নি। তবে বৈষয়িক ও বস্তুগত উপকরণকে যুদ্ধে নিরুত্সাহিতও করা হয়নি। কোরআন মাজিদে বলা হয়েছে, ‘আর তোমরা যতদূর তোমাদের সাধ্য-সামর্থ্যে কুলায়, বেশি বেশি করে শক্তি-দক্ষতা এবং সদস্য ও ঘোড়া যুদ্ধ করার জন্য প্রস্তুত রাখবে, যেন উহার সাহায্যে আল্লাহর ও তোমাদের নিজেদের শত্রুদের এবং এমনসব শত্রুদের যাদের তোমরা জান না, কিন্তু আল্লাহ জানেন ভীত-সন্ত্রস্ত করতে পার। আল্লাহর পথে তোমরা যা কিছু ব্যয় করবে তার পুরোপুরি প্রতিফল তোমাদের আদায় করে দেয়া হবে এবং তোমাদের প্রতি কোনোরূপ জুলুম করা হবে না।’
ইসলামী রাষ্ট্রের নিরাপত্তার বিষয়টিতে কোনোভাবেই হেলাফেলা করার সুযোগ নেই। রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হলে অবশ্যই তা রাষ্ট্রের আদর্শেরও বিপর্যয় ঘটাতে পারে। তাছাড়া অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রেও যেসব বিষয় নিরাপত্তাকে বিঘ্নিত করার সম্ভাবনা রয়েছে সে দিকেও লক্ষ্য রাখা জরুরি। এ ব্যাপারে গোটা মুসলিম জনগোষ্ঠীরই অপরিসীম দায়িত্ব রয়েছে।
লেখক : ই ক বা ল ক বী র মো হ ন
শিশু সাহিত্যিক, প্রবন্ধকার ও ব্যাংকার
ইসলামী রাষ্ট্রের নিরাপত্তা : ইসলামী রাষ্ট্রে নিরাপত্তার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। এই রাষ্ট্রের নিরাপত্তার বিষয়টি শুধু বৈদেশিক আক্রমণের দিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং অভ্যন্তরীণ দিক থেকেও এর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ইসলামী রাষ্ট্রে সমাজ কীভাবে নিরাপদ থাকবে, এর নিরাপত্তা কীভাবে বিধান করতে হবে তার সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে কোরআন ও হাদিসে। আর বাইরের শত্রুর আক্রমণ প্রতিহত করে ইসলামী রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিধানের নির্দেশনাও আছে ইসলামে। মুসলমানদের মান-ইজ্জত, ধন-সম্পদ এবং রক্ত যাতে নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে নিপতিত না হয়, সে জন্য মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) উদাত্ত কণ্ঠে ঘোষণা করলেন, ‘মুসলমান মুসলমানের ভাই। প্রত্যেক মুসলমানের মান, ইজ্জত, ধন-সম্পদ ও রক্ত অন্য মুসলমানের ওপর হারাম।’ (মুসলিম)। অর্থাত্ মানুষের সামাজিক বা রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে এমন কাজকে নবীজি কঠোরভাবে হারাম ঘোষণা করেছেন।
অর্থনৈতিক নিরাপত্তার বিষয়টিও ইসলামে গুরুত্বসহকারে বিবেচিত হয়েছে। এ জন্য যাকাত, ফিতরা ও উশরের বিধান চালু করা হয়েছে। আর এ নিরাপত্তার বিধানগুলো নিশ্চিত করার জন্য যাকাত প্রদানে আপত্তিকারী কিংবা অস্বীকারকারীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা পর্যন্ত করা হয়েছে। মহাগ্রন্থ আল কুরআনে শত্রুর আক্রমণ প্রতিহত করা এবং দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার নির্দেশ জারি করা হয়েছে। কুরআনে বলা হয়েছে, ‘যে সব লোক তোমাদের ওপর হামলা করেছে, তাদের সাথে যুদ্ধ কর, এ যুদ্ধ হবে খোদার পথে।’ শত্রুর আক্রমণকে মোকাবেলা করার জন্য কুরআনে আরো নির্দেশ এসেছে। শত্রুর আক্রমণ প্রতিহত করে ইসলামী রাষ্ট্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কাজকে উত্সাহিত করার জন্য মহানবী (সা) ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহর পথে একদিন সীমান্ত পাহারা দেয়া দুনিয়া ও এর ওপরে অবস্থিত সব জিনিস থেকেও উত্তম।’
ইসলামী রাষ্ট্রের নিরাপত্তা তথা রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার কৌশল সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো :
আদর্শিক শক্তি : কোনো আদর্শবাদী রাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বা নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে তার আদর্শিক শক্তি। এর নমুনা আমরা দেখেছি রাসুলে করীম (সা.) ও তার সাহাবিদের জীবনে এবং পরবর্তীকালে ইসলামের ইতিহাসে। আমরা এর জলজ্যান্ত উদাহরণ পাই বদর, খন্দক ও ইয়ারমুকসহ অসংখ্য জিহাদে। ইসলামের প্রথম জিহাদ বদরে ঈমানি শক্তিতে বলীয়ান মাত্র ৩১৩ জন মুসলমান বিপুল অস্ত্র ও অন্যান্য শক্তিতে বলীয়ান ১০০০ কাফিরের বিরুদ্ধে সহজে বিজয় লাভ করে।
কোরআন মজিদ উল্লেখ করেছে, ‘উচ্চমানের ঈমান ও ইয়াকিন এবং পরিপূর্ণ সবর ও দৃঢ়তা যদি থাকে তাহলে তারা দশগুণ শক্তির ওপরে বিজয় লাভ করতে সক্ষম হবে।’ আমাদের কাঙ্ক্ষিত রাষ্ট্রের নিরাপত্তায় আজও আদর্শই মূল শক্তি। অস্ত্র, মারণাস্ত্র ও সমরশক্তি সহযোগী মাত্র।
নৈতিক ও মানসিক শক্তি : শত্রুকে মোকাবিলা করার পরবর্তী গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয় তা হলো মানসিক বল ও নৈতিক শক্তি। মানসিক ও নৈতিক শক্তিতে দুর্বল বিশাল সৈন্যবাহিনী তার বিপুল রণসম্ভারসহ পরাজয়বরণ করেছে তার নজির পৃথিবীর ইতিহাসে যথেষ্ট রয়েছে।
ভূরি ভূরি উদাহরণ দেয়া যায়, কীভাবে আদর্শ ও নৈতিকতা সহজে বিজয় লাভ করতে পারে। এ জন্য ইসলাম মানসিক মনোবলকে, শত্রুকে মোকাবিলা করার অন্যতম বলে গুরুত্ব দিয়েছে। এ ব্যাপারে কোরআন মাজিদে বলা হয়েছে, ‘তোমরা সাহসহীন হইও না, ভারাক্রান্ত হইও না, তোমরাই বিজয়ী হবে, যদি তোমরা ঈমান ও দৃঢ়প্রত্যয়ের অধিকারী হও।’ মানসিক দুর্বলতা যে পরাজয়ের মূল কারণ তা উল্লেখ করে কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তোমরা ঈমান ও দৃঢ়প্রত্যয়সম্পন্ন একশ’ লোক হলে কাফিরদের এক সহস্র ব্যক্তির ওপর জয়ী হতে পারবে। কেননা, কাফিরদের জ্ঞান-বুদ্ধি বলে কিছুই নেই।’
দৃঢ় ঐক্য ও শৃঙ্খলা : যুদ্ধে জয় এবং শত্রুর মোকাবিলায় ঐক্য ও শৃঙ্খলা যে কত জরুরি তা ওহুদ যুদ্ধের ঘটনা থকে মুসলমানরা শিক্ষা নিতে পারে। ইসলাম প্রতিষ্ঠা ও ইসলামী রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিধানের ক্ষেত্রে ঐক্য ও শৃঙ্খলার যে কোনো বিকল্প নেই তা সহজেই অনুমেয়। আজ গোটা বিশ্বে ও বিভিন্ন দেশে মুসলমানদের বিপর্যয়, পরাজয় এবং পরাধীনতার পেছনে আমরা তাদের মধ্যকার অনৈক্য ও বিশৃঙ্খলাই লক্ষ্য করি।
মুসলমানদের ঐক্যের ব্যাপারে কোরআন মাজিদে বলা হয়েছে, ‘হে ঈমানদার লোকেরা! তোমরা যখন শত্রুবাহিনীর মুখোমুখি হবে তখন অবশ্যই দৃঢ় প্রতিষ্ঠিত হবে। আল্লাহকে খুব বেশি করে স্মরণ করবে। আশা করা যায়, তোমরা সাফল্যমণ্ডিত হবে। আর তোমরা আনুগত্য করবে আল্লাহ এবং তার রাসুলের, আর তোমরা পরস্পরের অনৈক্য ঝগড়া-বিবাদে মশগুল হবে না। তা যদি হও, তবে তোমরা ভীরু ও কাপুরুষ হয়ে যাবে। তোমাদের শক্তি ও উন্নতি হাওয়ায় উড়ে যাবে। তোমরা অবশ্যই ধৈর্যধারণ করবে। আল্লাহও ধৈর্যশীলদের সঙ্গেই আছেন।
বৈষয়িক ও বস্তুগত শক্তি : যে কোনো রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও বহিঃশত্রুর আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য তার আদর্শিক শক্তি এবং মনোবল ও মানসিক দৃঢ়তা যেমন প্রয়োজন তেমনি প্রয়োজন বস্তুগত শক্তিরও। যদিও এটা কখনোই মুখ্য বিষয় বলে বিবেচিত হয়নি। ইসলামে এই বৈষয়িক প্রাধান্যকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হয়নি। তবে বৈষয়িক ও বস্তুগত উপকরণকে যুদ্ধে নিরুত্সাহিতও করা হয়নি। কোরআন মাজিদে বলা হয়েছে, ‘আর তোমরা যতদূর তোমাদের সাধ্য-সামর্থ্যে কুলায়, বেশি বেশি করে শক্তি-দক্ষতা এবং সদস্য ও ঘোড়া যুদ্ধ করার জন্য প্রস্তুত রাখবে, যেন উহার সাহায্যে আল্লাহর ও তোমাদের নিজেদের শত্রুদের এবং এমনসব শত্রুদের যাদের তোমরা জান না, কিন্তু আল্লাহ জানেন ভীত-সন্ত্রস্ত করতে পার। আল্লাহর পথে তোমরা যা কিছু ব্যয় করবে তার পুরোপুরি প্রতিফল তোমাদের আদায় করে দেয়া হবে এবং তোমাদের প্রতি কোনোরূপ জুলুম করা হবে না।’
ইসলামী রাষ্ট্রের নিরাপত্তার বিষয়টিতে কোনোভাবেই হেলাফেলা করার সুযোগ নেই। রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হলে অবশ্যই তা রাষ্ট্রের আদর্শেরও বিপর্যয় ঘটাতে পারে। তাছাড়া অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রেও যেসব বিষয় নিরাপত্তাকে বিঘ্নিত করার সম্ভাবনা রয়েছে সে দিকেও লক্ষ্য রাখা জরুরি। এ ব্যাপারে গোটা মুসলিম জনগোষ্ঠীরই অপরিসীম দায়িত্ব রয়েছে।
লেখক : ই ক বা ল ক বী র মো হ ন
শিশু সাহিত্যিক, প্রবন্ধকার ও ব্যাংকার
No comments:
Post a Comment