— মাওলানা মুহাম্মাদ সা’দ
বিশ্ব ইজতিমা শুরু হয়েছে গত ২২ জানুয়ারি। ২৩ জানুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হয়েছে ইজতিমার প্রথম পর্ব। আজ থেকে শুরু হচ্ছে ইজতিমার দ্বিতীয় পর্ব। ৩০ জানুয়ারি দ্বিতীয় পর্বের সমাপ্তির মাধ্যমে শেষ হবে এবারকার বিশ্ব ইজতিমা। এবারই বিশ্ব ইজতিমা বাংলাদেশে দুই পর্বে অনুষ্ঠিত হলো। প্রথম পর্বে ২২ জানুয়ারি মাগরিবের নামাজের পর বিশ্ব তাবলিগ জামাতের শীর্ষ মুরুব্বি দিল্লি নিজামুদ্দিনের হজরত মাওলানা মুহাম্মাদ সা’দ যে গুরুত্বপূর্ণ বয়ান করেন সেটির অনুবাদ করেছেন লাবীব আবদুল্লাহ। বিশ্ব ইজতিমা বিষয়ক সংবাদ বুলেটিন ‘ইজতেমা প্রতিদিন’-এর সৌজন্যে সেটির নির্বাচিত অংশ তুলে ধরা হলো
দাওয়াত হলো আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ার মাধ্যম। আকিদা-মুআমালা, মু’আশারা ও আখলাক ঠিক হবে দাওয়াতের মাধ্যমে। দ্বীন শুধু কল্পনার নাম নয়। প্রিয় নবীজী যা নিয়ে দুনিয়ায় প্রেরিত হয়েছেন তার সামগ্রিক এক চিত্রের নাম দ্বীন। তিনি সাহাবায়ে কেরামকে পূর্ণ দ্বীনের ওপর উঠিয়েছেন। সাহাবায়ে কেরাম হলেন দ্বীনের বাস্তব প্রতিচ্ছবি। উম্মত যখন এই কাজ ছেড়ে দেবে তখন তারা অন্য জাতি ও ধর্মের দ্বারা মাদয়ু-আহূত হবে। তারা ভিন জাতির তাহজিব-তামাদ্দুনের আগ্রাসনের শিকার হবে। অন্যদের কৃষ্টি-কালচারের প্রতি তাদের ডাকা হবে। এই হালত থেকে নিত্যনতুন আধুনিক অনেক তরিকা বের করা হবে এবং হচ্ছে। কিন্তু উম্মাহ প্রথম যুগে যেভাবে যে কাজে ইসলাহ-সংশোধন হয়েছে, বর্তমান যুগেও সেভাবেই ইসলাহ হবে। অন্য কোনো তরিকায় হবে না অবস্থার পরিবর্তন। এই ফিকির ও ভাবনা ঠিক নয় যে দাওয়াতের কাজ শুধু নবীজী ও সাহাবায়ে কেরামের যুগের জন্য সীমিত ছিল। মূলত নবীওয়ালা এই কাজ সর্বকালের সবার জন্য। কিয়ামত পর্যন্ত সময়ের জন্য। উম্মত যদি সম্মিলিতভাবে এই কাজ ছেড়ে দেয় তাহলে তাদের ধ্বংস অনিবার্য। সম্মিলিতভাবে নয়, যদি ইনফেরাদি-ব্যক্তিগতভাবেও এ দাওয়াত ছেড়ে দেয়া হয় তাহলেও উম্মতের ক্ষতি হবে অপূরণীয়। এর প্রমাণ পাওয়া যায় প্রসিদ্ধ সাহাবি হজরত কা’ব ইবনে মালেকের (রা.) জীবনে। তিনি যদিও বদরি সাহাবি ছিলেন না, কিন্তু গাযওয়াতে তাবুকে তিনি যেতে পারেননি। এ ঘটনা প্রসিদ্ধ। এই না যাওয়ার কারণে পঞ্চাশ রাত তার জীবনে নেমে আসে দুঃখের ছায়া। তার ও তার দুই সাথীসহ দুঃখের মাঝে দিন কাটান। জমিন প্রস্তুত হওয়ার পরও তাদের জন্য হয়েছিল সংকীর্ণ। পুরো মদিনাবাসী তাদের বয়কট করেছিল। সালামের উত্তর দিত না। এ সময় গাস্সানের বাদশা তার নামে রেশমের কাপড়ে পত্র পাঠিয়ে তাকে দাওয়াত দেয় যে, তোমার সাথী তোমার ব্যাপারে সীমালঙ্ঘন করেছে। আমাদের পথে এসো। তিনি এই পত্র আগুনে জ্বালিয়ে দেন এবং বলেন, এক মুসিবত শেষ হওয়ার আগেই আরেক মুসিবত এসে হাজির।
সাহাবি হওয়া সত্ত্বেও তাকে গাস্সানের বাদশা দাওয়াত দিল। এ ঘটনা কিয়ামত পর্যন্ত সময়ের জন্য আমাদের জন্য শিক্ষা। দাওয়াত ছেড়ে শুধু আমল করলে দ্বীনের হেফাজত হবে না। দ্বীনের ওপর ইস্তেকামাত ও দ্বীনের হেফাজত নির্ভর করে অন্যকে দাওয়াত দেয়ার ওপর, দ্বীনের হেফাজত দাওয়াতের ওপর মাওকুফ-নির্ভরশীল। দাওয়াত না দিলে, বাতিল শক্তি এই উম্মতকে অন্য দিকে দাওয়াত দেবে।
ঈমান শিখতে হয়, ঈমানের মজলিস কায়েম করতে হয়। দাওয়াতের কাজে বুনিয়াদি সিফাত হলো ঈমানের সিফাত। কোরআন-হাদিসে মুমিনকে দাওয়াত দেয়ার কথা বলা হয়েছে। সাহাবায়ে কেরাম ঈমানের মজলিস কায়েম করতেন। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা (রা.) অন্য সাহাবিকে দাওয়াত দিয়ে বলতেন, এসো আমরা ঈমান আনি। অর্থাত্ ঈমানের আলোচনা করি। ঈমানের প্রতি দাওয়াত দেয়া প্রত্যেক মুমিনের দায়িত্ব, মুমিনের কাজ। প্রত্যেকেই অন্য কিছুর আলোচনা ছেড়ে আল্লাহ তায়ালার জাত ও সিফাত, তাওহিদ ও আল্লাহর বড়াইয়ের দিকে দাওয়াত দেবে। মজার বিষয় হলো, একজন আমাকে প্রশ্ন করলেন, ঈমানেরও কি আবার মজলিস হয়? এই মজলিস দ্বারা কি ঈমান শক্তিশালী হয়?
ইমাম বুখারি (রহ.) ঈমান শক্তিশালীকরণ বিষয়ে অধ্যায় সংযোজন করেছেন। হজরত মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.) অন্য সাহাবিকে দাওয়াত দিতেন। তার মা’মুল ছিল তিনি বলতেন, এসো ঈমান আনি। এসো ঈমানের তাজদিদ-নবায়ন করি। কোরআন কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ঈমান আন। অর্থাত্ ঈমান বৃদ্ধি কর। মূলত ঈমান অনুযায়ী ইতাআত-আনুগত্য হবে। দিল হলো ঈমানের জায়গা। কালেমার মেহনতের জায়গা। আমরা অনেকেই মনে করি, কালেমার দাওয়াত শুধু অমুসলিমদের জন্য। এ ধারণা ঠিক নয়। মুমিনদেরও কালেমার দাওয়াত দিতে হবে।
আজ সর্বত্র আল্লাহর বড়ত্ব ও কুদরত ছাড়া বস্তুবাদী মাদ্দিয়াতের আলোচনা। আমাদের বস্তুবাদী আলোচনা ছেড়ে আল্লাহর কুদরতের আলোচনা করতে হবে। এক সাহাবিকে রাসুল (সা.) জিজ্ঞেস করলেন, সকাল কীভাবে কাটিয়েছ? তিনি বললেন, ঈমানে হকের সঙ্গে, সঠিক ঈমানের সঙ্গে। তিনি বললেন, এর আলামত কী? তিনি বললেন, আরশ কুরসি আমার সামনে, কিয়ামতের বিষয়াদি আমাদের সামনে। আমার রূহকে দুনিয়া থেকে ফিরিয়ে নিয়ে আখেরাতমুখী করেছি। নবীজী বললেন, তুমি ঈমানের পরিচয় পেয়েছ। এর ওপর অটল থাক। মূলত ঈমান এভাবে ছুটে যায় যেমন ছুটে যায় লাগামহীন উট। আমরা যেমন জামা খুলে ফেলি, ঈমানও তেমনিভাবে খুলে যায়। আমাদের ঈমানের আলোচনা বাড়াতে হবে, গালেব রাখতে হবে। সাহাবায়ে কেরাম ইলমের হালকা কায়েম করতেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) ইলমের হালকা কায়েম করে অন্যকে দাওয়াত দিতেন এবং বলতেন, মসজিদে নবীজীর মিরাস বণ্টন হচ্ছে, আর তোমরা বাজারে? উম্মতকে সাহাবায়ে কেরাম জুহদ ও মেহনতের কথা বলে ঈমানের দাওয়াত দিতে হবে। আমাদের দাওয়াতের উদ্দেশ্য হলো দুনিয়ার নানা পরিবেশ থেকে ঈমানের পরিবেশে আনা। যেখানে আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো কিছুর আলোচনা থাকবে না। বস্তুবাদী নকশা ছেড়ে ঈমান বিল গায়েবের বিষয়ে দাওয়াত দেয়া।
ঈমান কী? এ বিষয়ে রাসুল (সা.) জিজ্ঞাসিত হয়ে বললেন, তোমার নেক কাজ যদি তোমাকে খুশি করে, অসত্ কাজ যদি তোমাকে পেরেশানে ফেলে, তাহলে তুমি মুমিন। আমরা মনে করি, আমরা ঈমানদার। অথচ আমাদের আমল, আমাদের আখলাক, আমাদের ইবাদত, আমাদের মুআমালা, আমাদের মুআশারা ঈমানের খেলাফ। এক সাহাবির পক্ষ থেকে নবীজীর দরবারে গিবত হয়ে গেল। নবীজী বললেন, তুমি কোরআনের খেলাপ করলে। যে ব্যক্তি কোরআনের হারামকে হালাল ভাববে সে কোরআনের খেলাপ করল। আমাদের কালিমার ইখলাস হাসিল করতে হবে। ঈমান ও ইখলাস একই। কালেমার ইখলাস হলো হারাম থেকে বিরত থাকা। ঈমান হলো উটকে লাগাম লাগানোর মতো। এর দ্বারা উটকে যেভাবে ইচ্ছা পরিচালনা করা যায়। অনুরূপ মুমিন ঈমান দ্বারা পরিচালিত হবে।
দ্বীনের দাওয়াত নিয়ে ঘোরাফেরা করা সাহাবায়ে কেরামের কাজ। সব উম্মতকে তাদের অঙ্গনে দাওয়াতের কাজ করতে হবে। দুনিয়ার কোনো প্রান্তে যদি আল্লাহর হুকুম লঙ্ঘন হয়, তাহলে তার মোকাবিলায় সবাইকে কাজ করতে হবে। অনেকেই মনে করে, দাওয়াতের কাজ অন্যান্য কল্যাণকর কাজের মতো একটি। এ ধারণাও ঠিক নয়। আমাদের মনে রাখতে হবে, আল্লাহর পথে দাওয়াতের কাজের মতো অন্য কোনো কাজ নেই। আমাদের এহসাস ও অনুভূতি খতম হয়ে যাচ্ছে। দাওয়াতের কাজ ছেড়ে দেয়া যে গোনাহ, এই অনুভূতিও নেই আমাদের মাঝে। আমাদের ইস্তেগফার করতে হবে এবং খোলাফায়ে রাশেদার মতো দাওয়াতের কাজ নিয়ে আল্লাহর রাস্তায় বের হতে হবে।
বিশ্ব ইজতিমা শুরু হয়েছে গত ২২ জানুয়ারি। ২৩ জানুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হয়েছে ইজতিমার প্রথম পর্ব। আজ থেকে শুরু হচ্ছে ইজতিমার দ্বিতীয় পর্ব। ৩০ জানুয়ারি দ্বিতীয় পর্বের সমাপ্তির মাধ্যমে শেষ হবে এবারকার বিশ্ব ইজতিমা। এবারই বিশ্ব ইজতিমা বাংলাদেশে দুই পর্বে অনুষ্ঠিত হলো। প্রথম পর্বে ২২ জানুয়ারি মাগরিবের নামাজের পর বিশ্ব তাবলিগ জামাতের শীর্ষ মুরুব্বি দিল্লি নিজামুদ্দিনের হজরত মাওলানা মুহাম্মাদ সা’দ যে গুরুত্বপূর্ণ বয়ান করেন সেটির অনুবাদ করেছেন লাবীব আবদুল্লাহ। বিশ্ব ইজতিমা বিষয়ক সংবাদ বুলেটিন ‘ইজতেমা প্রতিদিন’-এর সৌজন্যে সেটির নির্বাচিত অংশ তুলে ধরা হলো
দাওয়াত হলো আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ার মাধ্যম। আকিদা-মুআমালা, মু’আশারা ও আখলাক ঠিক হবে দাওয়াতের মাধ্যমে। দ্বীন শুধু কল্পনার নাম নয়। প্রিয় নবীজী যা নিয়ে দুনিয়ায় প্রেরিত হয়েছেন তার সামগ্রিক এক চিত্রের নাম দ্বীন। তিনি সাহাবায়ে কেরামকে পূর্ণ দ্বীনের ওপর উঠিয়েছেন। সাহাবায়ে কেরাম হলেন দ্বীনের বাস্তব প্রতিচ্ছবি। উম্মত যখন এই কাজ ছেড়ে দেবে তখন তারা অন্য জাতি ও ধর্মের দ্বারা মাদয়ু-আহূত হবে। তারা ভিন জাতির তাহজিব-তামাদ্দুনের আগ্রাসনের শিকার হবে। অন্যদের কৃষ্টি-কালচারের প্রতি তাদের ডাকা হবে। এই হালত থেকে নিত্যনতুন আধুনিক অনেক তরিকা বের করা হবে এবং হচ্ছে। কিন্তু উম্মাহ প্রথম যুগে যেভাবে যে কাজে ইসলাহ-সংশোধন হয়েছে, বর্তমান যুগেও সেভাবেই ইসলাহ হবে। অন্য কোনো তরিকায় হবে না অবস্থার পরিবর্তন। এই ফিকির ও ভাবনা ঠিক নয় যে দাওয়াতের কাজ শুধু নবীজী ও সাহাবায়ে কেরামের যুগের জন্য সীমিত ছিল। মূলত নবীওয়ালা এই কাজ সর্বকালের সবার জন্য। কিয়ামত পর্যন্ত সময়ের জন্য। উম্মত যদি সম্মিলিতভাবে এই কাজ ছেড়ে দেয় তাহলে তাদের ধ্বংস অনিবার্য। সম্মিলিতভাবে নয়, যদি ইনফেরাদি-ব্যক্তিগতভাবেও এ দাওয়াত ছেড়ে দেয়া হয় তাহলেও উম্মতের ক্ষতি হবে অপূরণীয়। এর প্রমাণ পাওয়া যায় প্রসিদ্ধ সাহাবি হজরত কা’ব ইবনে মালেকের (রা.) জীবনে। তিনি যদিও বদরি সাহাবি ছিলেন না, কিন্তু গাযওয়াতে তাবুকে তিনি যেতে পারেননি। এ ঘটনা প্রসিদ্ধ। এই না যাওয়ার কারণে পঞ্চাশ রাত তার জীবনে নেমে আসে দুঃখের ছায়া। তার ও তার দুই সাথীসহ দুঃখের মাঝে দিন কাটান। জমিন প্রস্তুত হওয়ার পরও তাদের জন্য হয়েছিল সংকীর্ণ। পুরো মদিনাবাসী তাদের বয়কট করেছিল। সালামের উত্তর দিত না। এ সময় গাস্সানের বাদশা তার নামে রেশমের কাপড়ে পত্র পাঠিয়ে তাকে দাওয়াত দেয় যে, তোমার সাথী তোমার ব্যাপারে সীমালঙ্ঘন করেছে। আমাদের পথে এসো। তিনি এই পত্র আগুনে জ্বালিয়ে দেন এবং বলেন, এক মুসিবত শেষ হওয়ার আগেই আরেক মুসিবত এসে হাজির।
সাহাবি হওয়া সত্ত্বেও তাকে গাস্সানের বাদশা দাওয়াত দিল। এ ঘটনা কিয়ামত পর্যন্ত সময়ের জন্য আমাদের জন্য শিক্ষা। দাওয়াত ছেড়ে শুধু আমল করলে দ্বীনের হেফাজত হবে না। দ্বীনের ওপর ইস্তেকামাত ও দ্বীনের হেফাজত নির্ভর করে অন্যকে দাওয়াত দেয়ার ওপর, দ্বীনের হেফাজত দাওয়াতের ওপর মাওকুফ-নির্ভরশীল। দাওয়াত না দিলে, বাতিল শক্তি এই উম্মতকে অন্য দিকে দাওয়াত দেবে।
ঈমান শিখতে হয়, ঈমানের মজলিস কায়েম করতে হয়। দাওয়াতের কাজে বুনিয়াদি সিফাত হলো ঈমানের সিফাত। কোরআন-হাদিসে মুমিনকে দাওয়াত দেয়ার কথা বলা হয়েছে। সাহাবায়ে কেরাম ঈমানের মজলিস কায়েম করতেন। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা (রা.) অন্য সাহাবিকে দাওয়াত দিয়ে বলতেন, এসো আমরা ঈমান আনি। অর্থাত্ ঈমানের আলোচনা করি। ঈমানের প্রতি দাওয়াত দেয়া প্রত্যেক মুমিনের দায়িত্ব, মুমিনের কাজ। প্রত্যেকেই অন্য কিছুর আলোচনা ছেড়ে আল্লাহ তায়ালার জাত ও সিফাত, তাওহিদ ও আল্লাহর বড়াইয়ের দিকে দাওয়াত দেবে। মজার বিষয় হলো, একজন আমাকে প্রশ্ন করলেন, ঈমানেরও কি আবার মজলিস হয়? এই মজলিস দ্বারা কি ঈমান শক্তিশালী হয়?
ইমাম বুখারি (রহ.) ঈমান শক্তিশালীকরণ বিষয়ে অধ্যায় সংযোজন করেছেন। হজরত মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.) অন্য সাহাবিকে দাওয়াত দিতেন। তার মা’মুল ছিল তিনি বলতেন, এসো ঈমান আনি। এসো ঈমানের তাজদিদ-নবায়ন করি। কোরআন কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ঈমান আন। অর্থাত্ ঈমান বৃদ্ধি কর। মূলত ঈমান অনুযায়ী ইতাআত-আনুগত্য হবে। দিল হলো ঈমানের জায়গা। কালেমার মেহনতের জায়গা। আমরা অনেকেই মনে করি, কালেমার দাওয়াত শুধু অমুসলিমদের জন্য। এ ধারণা ঠিক নয়। মুমিনদেরও কালেমার দাওয়াত দিতে হবে।
আজ সর্বত্র আল্লাহর বড়ত্ব ও কুদরত ছাড়া বস্তুবাদী মাদ্দিয়াতের আলোচনা। আমাদের বস্তুবাদী আলোচনা ছেড়ে আল্লাহর কুদরতের আলোচনা করতে হবে। এক সাহাবিকে রাসুল (সা.) জিজ্ঞেস করলেন, সকাল কীভাবে কাটিয়েছ? তিনি বললেন, ঈমানে হকের সঙ্গে, সঠিক ঈমানের সঙ্গে। তিনি বললেন, এর আলামত কী? তিনি বললেন, আরশ কুরসি আমার সামনে, কিয়ামতের বিষয়াদি আমাদের সামনে। আমার রূহকে দুনিয়া থেকে ফিরিয়ে নিয়ে আখেরাতমুখী করেছি। নবীজী বললেন, তুমি ঈমানের পরিচয় পেয়েছ। এর ওপর অটল থাক। মূলত ঈমান এভাবে ছুটে যায় যেমন ছুটে যায় লাগামহীন উট। আমরা যেমন জামা খুলে ফেলি, ঈমানও তেমনিভাবে খুলে যায়। আমাদের ঈমানের আলোচনা বাড়াতে হবে, গালেব রাখতে হবে। সাহাবায়ে কেরাম ইলমের হালকা কায়েম করতেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) ইলমের হালকা কায়েম করে অন্যকে দাওয়াত দিতেন এবং বলতেন, মসজিদে নবীজীর মিরাস বণ্টন হচ্ছে, আর তোমরা বাজারে? উম্মতকে সাহাবায়ে কেরাম জুহদ ও মেহনতের কথা বলে ঈমানের দাওয়াত দিতে হবে। আমাদের দাওয়াতের উদ্দেশ্য হলো দুনিয়ার নানা পরিবেশ থেকে ঈমানের পরিবেশে আনা। যেখানে আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো কিছুর আলোচনা থাকবে না। বস্তুবাদী নকশা ছেড়ে ঈমান বিল গায়েবের বিষয়ে দাওয়াত দেয়া।
ঈমান কী? এ বিষয়ে রাসুল (সা.) জিজ্ঞাসিত হয়ে বললেন, তোমার নেক কাজ যদি তোমাকে খুশি করে, অসত্ কাজ যদি তোমাকে পেরেশানে ফেলে, তাহলে তুমি মুমিন। আমরা মনে করি, আমরা ঈমানদার। অথচ আমাদের আমল, আমাদের আখলাক, আমাদের ইবাদত, আমাদের মুআমালা, আমাদের মুআশারা ঈমানের খেলাফ। এক সাহাবির পক্ষ থেকে নবীজীর দরবারে গিবত হয়ে গেল। নবীজী বললেন, তুমি কোরআনের খেলাপ করলে। যে ব্যক্তি কোরআনের হারামকে হালাল ভাববে সে কোরআনের খেলাপ করল। আমাদের কালিমার ইখলাস হাসিল করতে হবে। ঈমান ও ইখলাস একই। কালেমার ইখলাস হলো হারাম থেকে বিরত থাকা। ঈমান হলো উটকে লাগাম লাগানোর মতো। এর দ্বারা উটকে যেভাবে ইচ্ছা পরিচালনা করা যায়। অনুরূপ মুমিন ঈমান দ্বারা পরিচালিত হবে।
দ্বীনের দাওয়াত নিয়ে ঘোরাফেরা করা সাহাবায়ে কেরামের কাজ। সব উম্মতকে তাদের অঙ্গনে দাওয়াতের কাজ করতে হবে। দুনিয়ার কোনো প্রান্তে যদি আল্লাহর হুকুম লঙ্ঘন হয়, তাহলে তার মোকাবিলায় সবাইকে কাজ করতে হবে। অনেকেই মনে করে, দাওয়াতের কাজ অন্যান্য কল্যাণকর কাজের মতো একটি। এ ধারণাও ঠিক নয়। আমাদের মনে রাখতে হবে, আল্লাহর পথে দাওয়াতের কাজের মতো অন্য কোনো কাজ নেই। আমাদের এহসাস ও অনুভূতি খতম হয়ে যাচ্ছে। দাওয়াতের কাজ ছেড়ে দেয়া যে গোনাহ, এই অনুভূতিও নেই আমাদের মাঝে। আমাদের ইস্তেগফার করতে হবে এবং খোলাফায়ে রাশেদার মতো দাওয়াতের কাজ নিয়ে আল্লাহর রাস্তায় বের হতে হবে।
No comments:
Post a Comment