Friday, March 25, 2011

বিশ্বাসের আলো ও সেক্যুলারিজম

এমএ করিম ইবনে মছব্বির
সেক্যুলারিজমের (ঝবপঁষধত্রংস) শাব্দিক অর্থ ধর্মনিরপেক্ষতা। আর আভিধানিক অর্থ শিক্ষা, রাজনীতি, নৈতিক মূল্যবোধ প্রভৃতিকে ধর্মের প্রভাব থেকে মুক্ত রাখার মতবাদ। আমাদের দেশের ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীরা সেক্যুলারিজমের সংজ্ঞা দিয়েছেন এভাবে—কোনো ধর্মের প্রতি পক্ষপাতিত্ব না করা, কোনো ধর্মের প্রতি বিদ্বেষভাব পোষণ না করা এবং যার যার ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালনে অবাধ অধিকার। অভিধানের সংজ্ঞার সঙ্গে এই ব্যাখ্যার মিল কোথায়?
বস্তুত সাধারণ মানুষকে প্রতারিত করতেই ‘ধর্ম নিরপেক্ষতা’ শব্দের এভাবে অপব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে যেন তারা কোনোভাবেই অনুভব করতে না পারেন যে, ধর্ম নিরপেক্ষতাবাদের আবরণে তাদের ধর্মহীন মতবাদে দীক্ষিত করে তোলা হচ্ছে। নৈতিক মূল্যবোধে ন্যায়, অন্যায়, বৈধ, অবৈধ, পাক, নাপাক প্রভৃতি শিক্ষার উত্স হচ্ছে ধর্মীয় বিধিবিধান তথা শরিয়ত। অপরদিকে ধর্ম নিরপেক্ষতাবাদ হচ্ছে নৈতিক মূল্যবোধবর্জিত একটি মতবাদ। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, পাশ্চাত্যে লিভ টুগেদার বৈধ অধিকার বলে স্বীকৃতি পেয়েছে, আবার অরুচি ধরে গেলে যার যেদিকে ইচ্ছা চলে যাওয়ার অধিকারও সংরক্ষিত হয়েছে। এর চেয়ে আরও আশ্চর্যের বিষয়, সমকামিতার মতো ঘৃণ্য কাজকেও সেসব দেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে বৈধতার স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে।
এসবই হয়েছে ধর্মীয় প্রভাববিবর্জিত নীতিহীনতা তথা ধর্ম নিরপেক্ষতা থেকে। এর ফলে মানুষ আজ মনুষ্যত্ব তথা নৈতিক মূল্যবোধ বিসর্জন দিয়েছে। মানুষ অনেক নিচে নেমে গেছে। একদিক থেকে আজকের মানুষের চেয়ে পশুরা অনেক পরিচ্ছন্ন, অনেক ভদ্র ও পবিত্র। কারণ প্রকৃতির অনুশাসন দ্বারা পশু শাসিত ও চালিত হয়। তারা প্রকৃতির বিধান কখনও লঙ্ঘন করে না। আসলে বিশ্বাসের বিধানমুক্ত হয়ে লোভ-লালসার পেছনে ছুটে গিয়ে মানুষ অনেক নিচে নেমে যেতে পারে। যে জাহিলিয়াত থেকে একদিন আল্লাহ মানুষকে মুক্ত করেছিলেন আজ মানুষ সেদিকেই ঝাঁপিয়ে পড়ছে।
আরবে ইসলামের পূর্ববর্তী সময়কে জাহিলিয়াত বলা হয়। মানুষ যখন তার চিন্তা-চেতনা, নীতি-আদর্শ, মানদণ্ড, মূল্যবোধ, বিধি-বিধান, প্রথা, রীতি-নীতি আরেক মানুষের কাছ থেকে গ্রহণ করে থাকে, তখন সেটাই হচ্ছে যাবতীয় উপাদানসহ পূর্ণ জাহিলিয়াত। পক্ষান্তরে আল্লাহপাক মানবজাতিকে হেদায়েতের জন্য যুগে যুগে প্রেরিত রাসুলদের প্রতি শরীয়তের যে বিধি-বিধান নাজিল করেছেন, তার অনুসরণ করাই হচ্ছে জাহিলিয়াত থেকে মুক্তির উপায়। ইসলামের অনুসারীদের তাই বিশ্বাসের আলোয় জীবনের পথে চলা ছাড়া উপায় নেই। আমরা অনেকেই নিজেকে মুসলমান বলে দাবি করি এবং সেইসঙ্গে নিজেকে ধর্ম নিরপেক্ষ মতবাদের অনুসারী বলেও গর্ব করি।
পক্ষান্তরে আল্লাহপাক বলেন, হে ইমানদাররা, তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামে প্রবিষ্ট হও। (। আল্লাহ পাক আরও বলেন, হে ইমানদাররা, তোমরা আল্লাহকে যথাযথভাবে ভয় কর এবং তোমরা মুসলমান না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না। (আল-কোরআন)
উপরের উদ্ধৃত আয়াতগুলোর মর্ম হচ্ছে, ইসলাম গ্রহণ করলে সম্পূর্ণভাবেই করতে হবে। কাটছাঁট করার, অর্থাত্ সুবিধাজনক অংশটি গ্রহণ আর অপছন্দনীয় অংশটুকু বর্জন করার সুযোগ নেই। যারা আংশিকভাবে ইসলামকে মেনে চলতে চান, পার্থিব জীবনে তাদের জন্য লাঞ্ছনা আর কিয়ামত দিবসে কঠোর শাস্তি ছাড়া আর কী পরিণতি হতে পারে! প্রকৃতপক্ষে ইসলাম মানবজাতিকে পার্থিব জীবনের প্রতিটি বাঁকে চলার পদ্ধতি বলে দিয়েছে। এমন কোনো অঙ্গন নেই যেখানে ইসলামী বিধিবিধান ও আদেশ-নিষেধ প্রযোজ্য নয়। মানবজীবনে এর যে কোনো একটি অঙ্গনে ইসলামী বিধিবিধান অস্বীকার করলে তার ভয়াবহ পরিণাম সম্পর্কে আল্লাহপাক বলেন, আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, যেসব লোক তদানুযায়ী ফয়সালা করে না, তারা কাফির (আল কোরআন)।’ অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ পাক যা অবতীর্ণ করেছেন, তদানুযায়ী যারা ফয়সালা করে না, তারা ফাসিক-পাপাচারী (আল-কোরআন ২:৮৫)।’
বিশ্বাস ও আদর্শের সঙ্গে সঙ্গতিহীন চেতনার ধারক-বাহক ও আহ্বায়কদের পরিণাম সম্পর্কে মহানবী (সা.)-এর একটি বিখ্যাত হাদিস নিচে দেয়া হলো। প্রিয় নবী (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি জাহিলিয়াতের দিকে আহ্বান জানাবে, সে হবে জাহান্নামি। জনৈক সাহাবি (রা.) জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল (সা.), নামাজ-রোজা আদায় করা সত্ত্বেও কি সে জাহান্নামি হবে? মহানবী (সা.) বললেন, হ্যাঁ নামাজ-রোজা আদায় করলেও এবং নিজেকে মুসলমান বলে দাবি করলেও তাকে জাহান্নামেই যেতে হবে (মুসনাদে আহমাদ, হাকিম)।
সাহাবায়ে কেরামরা (রা.) ছিলেন খাঁটি ইমানদার। তাদের সাধারণ ইবাদতও ছিল অত্যন্ত উচ্চমানের ও নিখুঁত। হাদিসের বর্ণনা অনুযায়ী জাহিলিয়াতের দিকে আহ্বান জানানোর মতো একটি অপরাধের কারণে তাদের জাহান্নামে যেতে হবে।
এ অবস্থায় ধর্ম নিরপেক্ষতার মতো মারাত্মক পথে থাকলে তার অবিলম্বে আল্লাহর কাছে তওবা করে সঠিক পথে ফিরে আসা অপরিহার্য।

No comments:

Post a Comment