Friday, March 25, 2011

তাবলিগ জামাতের প্রতিষ্ঠাতা : মাওলানা মুহাম্মদ ইলিয়াস রহ. জীবনদর্শন

মাওলানা মোঃ আবুল হোসাইন পাটওয়ারী


ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ প্রান্তে ভারতবর্ষের দিল্লি এলাকার সর্ব বিখ্যাত অলি নিজাম উদ্দিন রহ. মাজার এলাকায় বাস করতেন যুগশ্রেষ্ঠ আবেদ হজরত মাওলানা ইসমাইল রহ.। তিনি ছিলেন আবেদ ও মানবসেবক। তিনি যত বেশি মানবসেবা করতে পারতেন তত বেশি আল্লাহ তায়ালার শুকরিয়া আদায় করতেন। তার পর্ণকুটিরে জন্মলাভ করেন বর্তমান বিশ্বখ্যাত বিশ্ব ইজতেমার অগ্রদূত হজরত মাওলানা ইলিয়াস শাহ আখতার রহ.। তিনি ১৩০৩ হিজরি সালে জন্মগ্রহণ করেন।
তার পূর্ব পুরুষরা ছিলেন ধর্মীয় ও সামাজিক নেতৃত্বের অগ্রদূত। তার জীবন অতিবাহিত হয় অনুকূল সামাজিক পরিবেশে। যার ফলে তিনি তার পূর্ব পুরুষদের চেয়ে অনেক বেশি খ্যাতি অর্জন করেন।
হজরত মাওলানা ইলিয়াস শাহ রহ. বাল্যশিক্ষা গ্রহণ করেন পিতা হজরত মাওলানা ইসমাইল রহ.-এর কাছ থেকে। ১৩১৪ হিজরিতে তিনি বড় ভাইয়ের সঙ্গে লেখাপড়ার জন্য নিজ গ্রাম ছেড়ে চলে যান। এ সময় তিনি ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়েন। ১৩২৬ হিজরি সালে তিনি দাওরা হাদিস বিভাগ থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রি লাভ করেন। হাদিস শাস্ত্রে তিনি গভীর জ্ঞান অর্জন করেন।
১৩২৮ হিজরি সাল থেকে ভারতবর্ষের সাহারানপুর মাজাহিরুল উলুম মাদ্রাসায় শিক্ষকতার পদে যোগদানের মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেন। এখানে প্রায় ৮ বছর ধরে ইলমে দ্বীনের তালিম দেন। এরপর তার পিতা ও বড় ভাইয়ের ইন্তেকালের পরে এলাকাবাসীর অনুরোধে তিনি নিজ গ্রাম মেওয়াতে ইলমে দ্বীনের খেদমতে আত্মনিয়োগ করেন। তত্কালে মেওয়াত এলাকার অধিবাসীরা শিক্ষা-দীক্ষা, ঈমান-আমলে ছিল খুবই নগণ্য। তারা নাম মাত্র মুসলমান ছিলেন।
তাবলিগ জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা হজরত মাওলানা ইলিয়াস শাহ আখতার রহ. তার পিতা হজরত মাওলানা ইসমাইল রহ. প্রতিষ্ঠিত মক্তব পরিচালনার মাধ্যমে এলাকাবাসীর মধ্যে হেদায়াতমূলক কার্য পরিচালনা শুরু করেন। আর এরই সূত্র ধরে শুরু হয় মানুষকে ঈমান ও আমলের প্রতি আহ্বান। আর সেই আহ্বানকে আজকের বিশ্বের দরবারে তাবলিগ জামাতের বিশ্ব ইজতেমা হিসেবে নামকরণ করা হয়েছে, যা ১৯৪৪ সাল থেকে অদ্যাবধি আমাদের বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
হজরত মাওলানা ইলিয়াস শাহ আখতার রহ.-এর মানব কল্যাণ সাধনে তার নিজ এলাকা মেওয়াত অঞ্চলে ঈমান ও আমলের যে বিপ্লব সৃষ্টি করেছিলেন তার বাস্তব নমুনা আমাদের বাংলাদেশে ঢাকা শহরের উত্তরাঞ্চলে তুরাগ নদীর তীরে অনুষ্ঠিত বিশ্ব ইজতেমার অনুষ্ঠানটি। মাওলানা ইলিয়াস শাহ রহ. তার দাওয়াতের মাধ্যমে মানুষকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন পরকালের চিন্তা-চেতনা আর আল্লাহ তায়ালার উপর দৃঢ়বিশ্বাস। আমরা দুনিয়াতে এসেছি আবার চলে যাব। কি নিয়ে যাব সেই সম্পদ তৈরির লক্ষ্যেই আজকের তাবলিগ জামাতের বিশ্বজোড়া আন্দোলন ও ইজতেমার অনুষ্ঠান। এখানে বিশেষ করে ঈমান, আমল ও দুনিয়ার কল্যাণ, আখিরাতের মুক্তির কথাগুলোই বয়ান করা হয়।
ইলিয়াস শাহ রহ.-এর মূল কথা ছিল হে মুসলমানেরা! তোমরা মুসলমান হও। মানব কল্যাণই ছিল তার জীবনের একমাত্র ব্রত। তাবলিগ জামাতের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে সর্বোচ্চ ত্যাগ সাধনার মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত সফলতা অর্জন। অকৃত্রিম ভালোবাসা, অক্লান্ত সাধনা, সর্বোপরি ইখলাছ ও লিল্লাহিয়াতের পরাকাষ্ঠার কারণেই তাবলিগ জামাত আজ মানুষের হৃদয়রাজ্য জয় করতে পেরেছে। সর্বোচ্চ ত্যাগ ও সাধনার মাধ্যমে জীবনের কাঙ্ক্ষিত সফলতার পথে এগিয়ে চলাই তাবলিগ জামাতের মূল টার্গেট। তাই তো বাংলাদেশের বিশ্ব ইজতেমা তিন দিনের পরিবর্তে একই সময়ে দুই বারে ৬ দিনে উন্নীত করা হয়েছে।
তাই আমি বলছি যে, তাবলিগ জামাতের প্রতিষ্ঠাতা মহান ব্যক্তি মাওলানা ইলিয়াস শাহ রহ. আজও আমাদের মাঝে চির বিদ্যমান হয়ে আছেন এবং ভবিষ্যতেও থাকবেন ইনশাআল্লাহ।
লেখক : শিক্ষক, খতিব।

No comments:

Post a Comment