Friday, March 25, 2011

অসহায় বিপন্ন মানুষের প্রতি তাকান

মা ও লা না শা হ আ ব দু স সা ত্তা র


ধনী-গরিব আল্লাহপাকের সৃষ্টি। বাহ্যিক দৃষ্টিতে আমরা প্রভূত অর্থ-সম্পদ অধিকারীকে ধনী বললেও আদতে সে ধনী নয়। আর স্বীয় অভাব মোচনের সামান্য পরিমাণ যার অর্থ, টাকা-পয়সা উপার্জনের ক্ষমতা নেই—এমন লোককে আমরা সাধারণত গরিব বলে থাকি। পবিত্র কোরআনে এ সম্পর্কে আল্লাহপাক বলেছেন। ওয়াল্লাহুল গানিয়্যুঅ আনতুমুল ফুকারাও। অর্থাত্ মহান আল্লাহপাকই একমাত্র ধনী আর তোমরা সবাই দরিদ্র বা গরিব। তাসাউফ শাস্ত্রের এ গরিবের ব্যাখ্যায় পবিত্র কোরআনের বিধিবিধানসম্মত হলেও ইসলাম গরিব-দুঃখী, অসহায়দের স্বার্থ সংরক্ষণ অধিকার বা হকগুলো ফরজ রূপে নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। জাকাত, ফেতরা, সদকা ছাড়াও স্বাভাবিক নিয়মে দেশপ্রথা ও প্রচলিত রীতিনীতি অনুযায়ী গরিব, দুঃখী, অসহায়রা ধনাঢ্য, সামর্থ্যবানদের থেকে সাহায্য-সহযোগিতা পেতে পারে।
ইসলাম মানবসমাজকে অর্থনৈতিক ভারসাম্য রক্ষা করার নির্দেশ দিয়েছে। একশ্রেণীর লোক ধন-সম্পদ ও অর্থের পাহাড় গড়বে। আর অন্য শ্রেণীর লোক দরিদ্রতার কষাঘাতে জর্জরিত হবে—এ নিয়ম-নীতি ইসলাম কখনোই পছন্দ করে না। ইসলাম ধর্ম ধন-সম্পদ ও অর্থকড়ির ব্যাপারে উদারতা ও ইনসাফের মাধ্যমে গরিবের অধিকার ব্যাপকভাবে সংরক্ষিত করেছে। অন্যদিকে গরিব, দুঃখী মানুষের স্বাভাবিক জীবনধারণের জন্য ধনীদের প্রতি তাদের হককে নির্দিষ্ট করে দিয়েছে। ইসলামী অর্থনীতিতে জাকাত, সদকা, ফেতরা ও দান-খয়রাত শুধু গরিব, অসহায় ও বিপন্ন মানুষের বেলায় প্রাপ্য এবং তা তাদের মৌলিক প্রাপ্য। গরিবদের মৌলিক অধিকার যেমন ইসলাম স্বীকার করেছে, পাশাপাশি তাদের মর্যাদাও দিয়েছে গুরুত্বসহকারে। এ সম্পর্কে হজরত রাসুলে পাক (সা.) হজরত বেলাল (রা.)-কে বলেছিলেন, ‘বেলাল, তুমি চেষ্টা করো যে, ইহলোক থেকে গরিব অবস্থায় যেতে পারো, ধনী-বিত্তবান ও অর্থশালী অবস্থায় যেতে চেষ্টা করো না।’ আল্লাহর নবী (সা.) আরও বলেছেন, ‘আমির অর্থাত্ ধনাঢ্য, বিত্তশালী লোকের ৪০ বছর আগে গরিব-দুঃখীরা বেহেশতে প্রবেশ করবে।’
‘রোজ কিয়ামতে আল্লাহ সুবহানাহুতায়ালা ফেরেশতাদের জিজ্ঞেস করবেন। দেখ তো আমার প্রিয় বান্দারা কোথায়। ফেরেশতারা আরজ করবেন, ইয়া আল্লাহ। কারা আপনার প্রিয় বান্দা। মহান আল্লাহপাকের পক্ষ থেকে উত্তর আসবে, তারা মুসলমান দরিদ্র লোক। যারা আমার দানে অর্থাত্ আমি যা দিতাম তাতে তারা পরিতৃপ্ত এবং সন্তুষ্ট ছিল, এসব লোককে বেহেশতে নিয়ে যাও।’
আমরা প্রতি মুহূর্তে মহান আল্লাহপাকের অগণিত নেয়ামত ভোগ করে আসছি। এর শুকরিয়া আদায় করে শেষ করা যায় না। দুনিয়ার জীবনে গরিব, অসহায়-দুস্থ মানুষের অধিকার ও সম্মান আল্লাহপাক প্রদান করেছেন, তেমন ধনাঢ্য-বিত্তবানদের তাদের প্রতি যথাযথ কর্তব্য পালনের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। তাই স্বাভাবিক নিয়ম ছাড়া বিশেষ করে জাকাত, সদকা, ফেতরা প্রদানের মাধ্যমে আমরা দুঃখভরা দরিদ্র, অসহায়, মিসকিন, দুস্থদের সাহায্য-সহযোগিতা করতে পারি। এ সম্পর্কে আমাদের প্রিয়নবী করীম (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা গরিব, অসহায়দের সঙ্গে বন্ধুত্ব স্থাপন কর এবং তাদের প্রতি সাধ্য অনুযায়ী সাহায্যের হাত বাড়াও। পরোকালে তারাই তোমার ধন-সম্বল হবে। জেনে রাখ, দান-খয়রাতে অর্থ-সম্পদ বৃদ্ধি পায়।’ একবার সাহাবিরা হজরত রাসুলে পাক (সা.)-কে জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে আল্লাহর নবী, যার সামর্থ্য নেই, সেই ব্যক্তি কীভাবে তার কর্তব্য পালন করবে। এর উত্তরে আল্লাহর নবী (সা.) বললেন, নিজের শক্তি দিয়ে, পরিশ্রম করে।’ সাহাবিরা আবার জিজ্ঞেস করলেন, ‘যদি সেরূপ কোনো সুযোগ না পায়, তাহলে কী করবে?’ আল্লাহর নবী (সা.) বললেন, ‘যেসব গরিব-দুঃখী, কষ্টে-বিপদে জর্জরিত, তাদের দান-খয়রাতের মাধ্যমে সেবা করবে।’
অতএব আসুন, যথাসাধ্য আমরা প্রতিনিয়ত গরিব, দুঃখী, অসহায়, বিপন্ন, ফকির, মিসকিন, এতিমদের সেবা ও সাহায্য-সহযোগিতায় হাত বাড়াই।ষ
লেখক : সভাপতি, বাংলাদেশ, সিরাত মিশন।

No comments:

Post a Comment