অবশেষে কামরায় ঢুকে পড়লেন উমর (রা.)। আর অপেক্ষা করতে পারলেন না। অপেক্ষার প্রয়োজনও ছিল না। একবার, দু’বার এবং তিনবার অনুমতি চাওয়ার পর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে কামরার ভেতরে এসে হাজির হওয়ার অনুমতি দিয়েছেন। রাসূলুল্লাহ্র মুখোমুখি দাঁড়ানোর জন্য বিপুল বেচাইনির ঝড়ে তিনি আক্রান্ত হয়ে পড়েছিলেন। অন্য রকম একটি ভার ভার যন্ত্রণা ও কষ্ট তাঁকে কুঁকরে তুলছিল। উমর (রা.) তাঁর বিনীত দুটি চোখ, সমব্যথি ও কাতর দুটি চোখ মেলে দেখলেন রাসূলুল্লাহ (সা.) দড়ির খাটিয়ার উপর শুয়ে আছেন। নির্জনে, নিঃশব্দে একটি ঘরে তাঁর এই শুয়ে থাকা দেখে উমরের হৃদয়ে অসম্ভব কষ্টের তুষারপাত শুরু হলো। দুঃখের এক পশলা হাহাকার তার অন্তর আর্দ্র করে তুলল। কী বলবেন, কী করবেন, কোনো কিছুই ঠিক করতে পারছেন না। প্রশ্ন কৌতূহল আর কষ্টের ধারালো অনুভবগুলোই তাঁর এখানে এসে আরও তীক্ষষ্ট হয়ে উঠেছে।
গত রাতে রাসূলুল্লাহ্র একটি ব্যক্তিগত কষ্টের কথা, দুঃখের কথা, মনোযাতনা ও যন্ত্রণার কথা শুনে উমরের ব্যাকুলতা রাতের ঘুমে নিরন্তর আঘাত করেছে। ফজরের জামাতে এসে তিনি দৌড়ে শামিল হয়েছেন মদীনায়। জামাতের পর রাসূলুল্লাহ্ (সা.) সময়ক্ষেপণ না করে আবারও নির্জন অন্দরে চলে আসায় উমর (রা.) বিহ্বল হয়ে মসজিদে বসেছিলেন কিছুক্ষণ। মাঝে দু’বার এসে অনুমতি চেয়েছিলেন; অনুমতি মিলেনি। অবশেষে এক বুকফাটা-আব্দার তিনি রাসূলুল্লাহ্র (সা.) দরবারে পাঠালেন। রাসূলুল্লাহ্ (সা.) তাঁকে অনুমতি দিলেন এবং এরপর তিনি কামরায় ঢুকলেন।
উমর (রা.) রাসূলুল্লাহ্র (সা.) মুখোমুখি হয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে তাঁকে দেখছিলেন। তাঁর পারিবারিক একটি সঙ্কটে, দাম্পত্যের একটি সমস্যায় তিনি কতটা কষ্টের মধ্যে আছেন, সবার অগোচরে, কতটা নিঃশব্দ দুঃখের মধ্যে প্রহর কাটছে তাঁর, উমর (রা.) সম্ভবত তা-ই লক্ষ্য করছেন। উমর (রা.) তাঁর দু’চোখ মেলে রাসূলুল্লাহেক (সা.) দেখলেন। দেখলেন সাধারণ একটি দড়ির খাটে শুয়ে আছেন তিনি। তাঁর গায়ে দড়ির দাগ পড়ে গেছে। কোমল ত্বকে দারিদ্র্যের নিষ্ঠুর আঁচড়ের মতোই সেই দাগ জ্বল জ্বল করছে। উমর (রা.) দেখলেন আসবাবপত্রহীন, আয়োজনহীন, বিত্তহীন এই কামরার এক পাশে রাখা আছে সামান্য যব, আরবের মোটা খাবার। আরেক পাশে একটি খুঁটিতে ঝুলছে সামান্য একটি শুর চামড়া। উল্লেখ করার মতো তেমন আর কোনো আসবাবপত্র ঘরে নেই।
দেখতে দেখতেই উমরের বোধগুলো ঝাপসা হয়ে এলো। মুষলধারে নেমে আসা বৃষ্টিতে হঠাত্ আক্রান্ত পথিকের মতো উমরের হৃদয় কাকভেজা হয়ে গেল। নিয়ন্ত্রণের শক্ত পিঞ্জর ভেঙে গেল তাঁর। উমর (রা.) ডুকরে কেঁদে উঠলেন। কাঁদতেই লাগলেন। দু’চোখ বেয়ে বিন্দু বিন্দু কষ্টের ভাঁপ কপাল বেয়ে নেমে আসতে লাগল। উমর (রা.) এক সীমানাহীন ভালোবাসার ভুবন, হাহাকারের ভুবন, পবিত্র যন্ত্রণার ভুবনে বন্দি হয়ে গেলেন।
অঝোরে বৃষ্টি ঝরার মতো উমরের দু’চোখ বেয়ে অশ্রু ঝরতে দেখে অসম্ভব কোমল কণ্ঠে বিপুল সান্ত্বনার আবেশ ছড়াতে রাসূলে আকরাম (সা.) জিজ্ঞাসা করলেন ‘উমর! তুমি কাঁদছ কেন?’
দিশেহারা কান্নার মাঝেও অশ্রুপাতের অবিরল ধারার মধ্যেও উমর আরজ করলেন ‘এছাড়া আমার কান্নার আর কী কারণ থাকতে পারে যে, রোম সম্রাট আর পারস্য সম্রাট পৃথিবীর প্রাচুর্য ভোগ করছে। অথচ নবী হয়ে আপনার এই দারিদ্র্য!’
সম্পূর্ণ পাত্র উপুড় করে দেয়ার মতোই উমর তাঁর ভালোবাসা ও কষ্টের, দুঃখ ও যন্ত্রণার আদ্যোপান্ত উপুড় করে দিলেন। তাঁর নিঃশব্দ হাহাকার প্রচণ্ডভাবে বিস্ফোরিত হলো। মানবতার, সহানুভূতির সর্বোচ্চ শৃঙ্গে যার আয়েশী অবস্থান, সেই রাসূলে আকরাম (সা.) সব শুনলেন, দেখলেন। তাঁর এক প্রেমিক সহচরের হৃদয় উজাড় করা কান্নায় তিনি অভির্ভূত হলেন। তিনি এক অনন্য অভিব্যক্তি শূন্যে ছেড়ে দিলেন। দৃশ্যমান বাস্তবতার ঊর্ধ্বে, সংকীর্ণ ইহকালীনতার বাইরে এক দিগন্তহীন দিগন্ত থেকে তিনি উচ্চারণ করলেন ‘উমর! তুমি কি এতে সন্তুষ্ট নও যে, রোম সম্রাট ও পারস্য সম্রাট পৃথিবীর প্রাচুর্য ভোগ করুক আর আমি পরকালের ক্ষয়-লয়হীন অনাবিল শান্তি লাভ করি?’
অশ্রুসিক্ত উমরের দু’চোখ স্থির হয়ে আছে রাসূলুল্লাহ্র (সা.) অদ্ভুত প্রশান্ত মুখের উপর। এ প্রশ্নের জবাবে তাঁর নিজের মুখে কোনো শব্দ নেই। তিনি শুধু শান্তির অনাবিল প্রতীক এই মুবারক মুখের আদলে শান্তির মানচিত্র খুঁজে নিচ্ছেন। তাঁর বুকের মধ্যে জমে যাওয়া কষ্টের পালকগুলো উড়ে উড়ে চলে যাচ্ছে দূরে, অন্যখানে।
শ রী ফ মু হা ম্ম দ
গত রাতে রাসূলুল্লাহ্র একটি ব্যক্তিগত কষ্টের কথা, দুঃখের কথা, মনোযাতনা ও যন্ত্রণার কথা শুনে উমরের ব্যাকুলতা রাতের ঘুমে নিরন্তর আঘাত করেছে। ফজরের জামাতে এসে তিনি দৌড়ে শামিল হয়েছেন মদীনায়। জামাতের পর রাসূলুল্লাহ্ (সা.) সময়ক্ষেপণ না করে আবারও নির্জন অন্দরে চলে আসায় উমর (রা.) বিহ্বল হয়ে মসজিদে বসেছিলেন কিছুক্ষণ। মাঝে দু’বার এসে অনুমতি চেয়েছিলেন; অনুমতি মিলেনি। অবশেষে এক বুকফাটা-আব্দার তিনি রাসূলুল্লাহ্র (সা.) দরবারে পাঠালেন। রাসূলুল্লাহ্ (সা.) তাঁকে অনুমতি দিলেন এবং এরপর তিনি কামরায় ঢুকলেন।
উমর (রা.) রাসূলুল্লাহ্র (সা.) মুখোমুখি হয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে তাঁকে দেখছিলেন। তাঁর পারিবারিক একটি সঙ্কটে, দাম্পত্যের একটি সমস্যায় তিনি কতটা কষ্টের মধ্যে আছেন, সবার অগোচরে, কতটা নিঃশব্দ দুঃখের মধ্যে প্রহর কাটছে তাঁর, উমর (রা.) সম্ভবত তা-ই লক্ষ্য করছেন। উমর (রা.) তাঁর দু’চোখ মেলে রাসূলুল্লাহেক (সা.) দেখলেন। দেখলেন সাধারণ একটি দড়ির খাটে শুয়ে আছেন তিনি। তাঁর গায়ে দড়ির দাগ পড়ে গেছে। কোমল ত্বকে দারিদ্র্যের নিষ্ঠুর আঁচড়ের মতোই সেই দাগ জ্বল জ্বল করছে। উমর (রা.) দেখলেন আসবাবপত্রহীন, আয়োজনহীন, বিত্তহীন এই কামরার এক পাশে রাখা আছে সামান্য যব, আরবের মোটা খাবার। আরেক পাশে একটি খুঁটিতে ঝুলছে সামান্য একটি শুর চামড়া। উল্লেখ করার মতো তেমন আর কোনো আসবাবপত্র ঘরে নেই।
দেখতে দেখতেই উমরের বোধগুলো ঝাপসা হয়ে এলো। মুষলধারে নেমে আসা বৃষ্টিতে হঠাত্ আক্রান্ত পথিকের মতো উমরের হৃদয় কাকভেজা হয়ে গেল। নিয়ন্ত্রণের শক্ত পিঞ্জর ভেঙে গেল তাঁর। উমর (রা.) ডুকরে কেঁদে উঠলেন। কাঁদতেই লাগলেন। দু’চোখ বেয়ে বিন্দু বিন্দু কষ্টের ভাঁপ কপাল বেয়ে নেমে আসতে লাগল। উমর (রা.) এক সীমানাহীন ভালোবাসার ভুবন, হাহাকারের ভুবন, পবিত্র যন্ত্রণার ভুবনে বন্দি হয়ে গেলেন।
অঝোরে বৃষ্টি ঝরার মতো উমরের দু’চোখ বেয়ে অশ্রু ঝরতে দেখে অসম্ভব কোমল কণ্ঠে বিপুল সান্ত্বনার আবেশ ছড়াতে রাসূলে আকরাম (সা.) জিজ্ঞাসা করলেন ‘উমর! তুমি কাঁদছ কেন?’
দিশেহারা কান্নার মাঝেও অশ্রুপাতের অবিরল ধারার মধ্যেও উমর আরজ করলেন ‘এছাড়া আমার কান্নার আর কী কারণ থাকতে পারে যে, রোম সম্রাট আর পারস্য সম্রাট পৃথিবীর প্রাচুর্য ভোগ করছে। অথচ নবী হয়ে আপনার এই দারিদ্র্য!’
সম্পূর্ণ পাত্র উপুড় করে দেয়ার মতোই উমর তাঁর ভালোবাসা ও কষ্টের, দুঃখ ও যন্ত্রণার আদ্যোপান্ত উপুড় করে দিলেন। তাঁর নিঃশব্দ হাহাকার প্রচণ্ডভাবে বিস্ফোরিত হলো। মানবতার, সহানুভূতির সর্বোচ্চ শৃঙ্গে যার আয়েশী অবস্থান, সেই রাসূলে আকরাম (সা.) সব শুনলেন, দেখলেন। তাঁর এক প্রেমিক সহচরের হৃদয় উজাড় করা কান্নায় তিনি অভির্ভূত হলেন। তিনি এক অনন্য অভিব্যক্তি শূন্যে ছেড়ে দিলেন। দৃশ্যমান বাস্তবতার ঊর্ধ্বে, সংকীর্ণ ইহকালীনতার বাইরে এক দিগন্তহীন দিগন্ত থেকে তিনি উচ্চারণ করলেন ‘উমর! তুমি কি এতে সন্তুষ্ট নও যে, রোম সম্রাট ও পারস্য সম্রাট পৃথিবীর প্রাচুর্য ভোগ করুক আর আমি পরকালের ক্ষয়-লয়হীন অনাবিল শান্তি লাভ করি?’
অশ্রুসিক্ত উমরের দু’চোখ স্থির হয়ে আছে রাসূলুল্লাহ্র (সা.) অদ্ভুত প্রশান্ত মুখের উপর। এ প্রশ্নের জবাবে তাঁর নিজের মুখে কোনো শব্দ নেই। তিনি শুধু শান্তির অনাবিল প্রতীক এই মুবারক মুখের আদলে শান্তির মানচিত্র খুঁজে নিচ্ছেন। তাঁর বুকের মধ্যে জমে যাওয়া কষ্টের পালকগুলো উড়ে উড়ে চলে যাচ্ছে দূরে, অন্যখানে।
শ রী ফ মু হা ম্ম দ
No comments:
Post a Comment