Friday, March 25, 2011

রাষ্ট্রের নিয়োগ জরুরি নয় ফতোয়া দেয়ার জন্য অভিজ্ঞ আলেম হওয়া অপরিহার্য

উসুলুল ইফতা ও আদাবুল মুফতি সংক্রান্ত কিতাবে মুফতির গুণাবলী ও শর্তগুলো উল্লেখ রয়েছে। সেখানে এমন কোনো কথা নেই যে, ফতোয়া দেয়ার জন্য মুফতিকে রাষ্ট্রের অনুমোদিত ব্যক্তি বা নিয়োগপ্রাপ্ত হতে হবে। সেসব গুণাবলী ও শর্তগুলোর সারকথা এই যে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির মধ্যে ফতোয়ার দায়িত্ব পালনের যোগ্যতা এবং ফিকহ-ফতোয়ার বিষয়ে নির্ভরযোগ্য ও স্বীকৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে তার এ যোগ্যতার স্বীকৃতি থাকা আবশ্যক।
যে ব্যক্তির মধ্যে এ যোগ্যতা আছে সে ফতোয়া দেয়ার ক্ষেত্রে শরিয়তের পক্ষ থেকে শুধু অনুমোদিতই নয়; আদিষ্টও বটে। এ জন্য অন্য কারও অনুমতির প্রয়োজন নেই। যেমনটি কোরআন শিক্ষা, তাফসির পাঠ, হাদিস শিক্ষা, ফিকহ শিক্ষা, সিরাতুন্নবীর আলোচনা, ওয়াজ-নসিহত, তাজকিয়া-তরবিয়ত ও অন্যান্য দ্বীনি বিষয়ে রচনা ও সংকলনের জন্য সরকারের অনুমতি ও নিয়োগের কোনো প্রয়োজন নেই।
ইসলামের প্রথম যুগ থেকে নিয়ে ইসলামী খেলাফত ও শাসনের শেষ সময় পর্যন্ত এই ধারা অব্যাহত ছিল যে, কাজী ও হাকিমের নিয়োগ খলিফা বা তার অনুমোদিত ব্যক্তির পক্ষ থেকে হওয়া আবশ্যক ছিল। কেননা, সরকারি নিয়োগ ছাড়া কেউ এ দায়িত্ব পালন করতে পারত না। অন্যদিকে ফতোয়া দেয়ার দায়িত্ব ফকিহ ও মুফতিরা নিজেরাই পালন করতেন। সাধারণ মানুষ তাদের শরণাপন্ন হতো আর তারা তাদের প্রশ্নের উত্তর দিতেন। তবে এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের ভূমিকা এই ছিল যে, কোথাও কোনো অযোগ্য লোক ফতোয়া দিলে স্বীকৃত ফকিহ ও মুফতিদের পরামর্শক্রমে রাষ্ট্র তাকে এ কাজ থেকে নিবৃত্ত করত।
ইমাম সাদ উদ্দীন হারেছী, যিনি একজন কাজী (বিচারপতি) ছিলেন তিনি বলেন, ফতোয়া দেয়া তো একটি নেক কাজ। (এটি তো বিচার নয় যে, এর জন্য সরকারি অনুমোদন প্রয়োজন)। আগেকার মনীষীদের কর্মপন্থাও এই ছিল যে, এ বিষয়ে সরকারি অনুমোদনের অপেক্ষা করা হতো না। [আলআদাবুশ শরইয়্যাহ, ইবনে মুফলিহ (মৃত্যু : ৭৬৩ হি.) ৩/৩৯০]
ড. আবদুল করীম যাইদান বলেছেন, যে ফতোয়া দেয়ার যোগ্য কিন্তু মুফতি হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত নন তারও সরকারের অনুমতি ছাড়াই ফতোয়া দেয়ার অধিকার আছে। কেননা, ফতোয়া দেয়া মূলত আল্লাহর শরিয়ত বর্ণনা ও তাঁর বিধানের প্রচারমাত্র। তাই এর যোগ্য ব্যক্তির জন্য তা একটি দ্বীনি দায়িত্ব। আর কোনো দ্বীনি দায়িত্ব পালনে সরকারের অনুমতির প্রয়োজন নেই।
একটু ভেবে দেখুন, শরিয়তে কাজীর মতো মুফতিও যদি সরকারিভাবে নিযুক্ত হতেন তাহলে উপরোক্ত আলোচনা অনর্থক হতো। বিচার ও বিচারকের ক্ষেত্রে কে বিচারের যোগ্য, কে যোগ্য নয়—সাধারণ মানুষের তা নিরূপণের জন্য কোনো উপায়-নিদর্শন বলা হয়নি; বরং সেখানে তো স্পষ্ট করেই বলা হয়েছে, সরকারি নিয়োগ ছাড়া বিচারের কোনো বৈধতা নেই।
ফতোয়া দেয়ার বিষয়ে সরকারের দায়িত্ব ও ভূমিকা কী—এ সম্পর্কে ‘আলফকিহ ওয়াল মুতাফাককিহ’ কিতাবে খতিব বাগদাদী (মৃত্যু : ৪৬৩ হি.) লেখেন—
রাষ্ট্রের দায়িত্ব হলো যারা ফিকহ অধ্যয়ন ও ফতোয়া দেয়ার কাজে নিজেকে নিয়োজিত করে তাদের জন্য এ পরিমাণ ভাতা প্রদান করা যেন তারা জীবিকার চিন্তা থেকে মুক্ত থাকে। আর এ ভাতা মুসলমানদের বায়তুল মাল (রাষ্ট্রীয় কোষাগার) থেকে দেয়া হবে (২/৩৪৭)।
ওমর ইবনে আবদুল আযীয (রা.)-এর ফরমান সম্পর্কেও চিন্তা করা যায়। ফিকহ ও ফতোয়ার খেদমতে যারা নিয়োজিত আছেন, তাদের মধ্যে কারা সরকারি নিয়োগপ্রাপ্ত আর কারা নিয়োগপ্রাপ্ত নন—এ বিষয়টি যাচাই করার কথা তিনি বলেননি। তিনি বলেছেন, যারাই এ খেদমতে নিয়োজিত আছেন তাদের বায়তুল মাল থেকে ভাতা প্রদান করুন। সৌভাগ্যবান ও সচেতন রাষ্ট্রের দৃষ্টান্ত এমনই হয়ে থাকে। ষ

লেখক : মাওলানা মুহাম্মাদ আবদুল মালেক
গবেষক, গ্রন্থকার ও বিভাগীয় প্রধান, উলুমুল হাদিস অনুষদ
মারকাযুদ দাওয়াহ আল ইসলামিয়া ঢাকা

No comments:

Post a Comment