ড. মু. বি লা ল হু সা ই ন
ইসলামে দাওয়াতের গুরুত্ব্ব অপরিসীম। যে কারণে অসংখ্য নবী-রাসুল এ পৃথিবীতে আগমন করেছেন। ‘দাওয়াহ’ আরবি শব্দ। যার শাব্দিক অর্থ—আহ্বান করা, ডাকা। পরিভাষায় সব মানব সমাজকে ইহলৌকিক ও পারলৌকিক সুখ-শান্তি, কল্যাণ ও মুক্তি লাভের উদ্দেশ্যে পরিচালিত কার্যক্রমকে ইসলামে দাওয়াত হিসেবে গণ্য করা হয়। এ দাওয়াত মানুষকে অশান্তি থেকে শান্তির দিকে, অকল্যাণ থেকে কল্যাণের দিকে, সঙ্কীর্ণতা থেকে উদারতার দিকে, জাহান্নাম থেকে জান্নাতের দিকে এবং পশ্চাত্পদতা থেকে প্রগতির দিকে ধাবিত করে। আল্লাহর সঙ্গে মানব জাতির সম্পর্ক দৃঢ় করতে দাওয়াত সবচেয়ে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
ইসলামী দাওয়াতের কর্মসূচি আল্লাহর পক্ষ থেকে মানবজাতির জন্য এক বিরাট নিয়ামত। তিনি মানবজাতির মধ্য থেকে কিছু লোককে বাছাই করে দাওয়াতের জন্য মনোনীত করেছেন। তাদের আল্লাহ তায়ালা বিশেষ মর্যাদা দিয়েছেন। পৃথিবীর প্রথম মানব ও নবী হজরত আদম (আ.) এ দাওয়াতের কার্যক্রমের সূচনা করেন। পরবর্তী সময়ে হজরত নূহ, হুদ, সালিহ, ইয়াকুব ও ইউসুফ (আ.) থেকে হজরত ঈসা (আ.) পর্যন্ত অসংখ্য নবী-রাসুলের মাধ্যমে এ ধারা অব্যাহত রাখেন। তারা আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে আসা বাণীগুলো সর্বস্তরের মানুষের কাছে পৌঁছে দিতেন।
মহানবীর (সা.) দাওয়াত ছিল সার্বজনীন। পূর্ববতী নবী ও রাসুলরা বিশেষ কোনো গোত্র, গোষ্ঠী বা অঞ্চলের অধিবাসীকে দাওয়াত দিয়েছেন। ফলে তাদের দাওয়াত সার্বজনীনভাবে গ্রহণযোগ্য হয়নি। মহানবী (সা.) সব জাতি-গোষ্ঠীর কাছে আল্লাহ প্রদত্ত দাওয়াত দিয়েছেন। মহান আল্লাহ তায়ালা এ জন্যই তাকে ঘোষণা দেয়ার নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘আপনি বলুন, হে মানবমণ্ডলী! আমি তোমাদের সবার প্রতি আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত রাসুল’ (সূরা আল-আ’রাফ : ১৫৮)। তাঁর অবর্তমানে দাওয়াতের এ গুরুদায়িত্ব অর্পিত হয় মুসলিম উম্মাহর প্রতি। যারা কিয়ামত পর্যন্ত এ দায়িত্ব পালন অব্যাহত রাখবে।
সমাজের সব ধরনের অন্যায়, অবিচার, পাপাচার, মারামারি, দুর্নীতি, ব্যক্তি চরিত্র নষ্টসহ সব অপরাধ নির্মূলে ইসলামী দাওয়াত বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখে। কেননা, এ দাওয়াতের মূল বিষয়বস্তু হলো সত্ কাজের আদেশ এবং অসত্ কাজের নিষেধ। সেহেতু ব্যক্তি সব ধরনের অন্যায় কাজ থেকে বিরত থেকে সমাজে সুবিচার প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করবে। পাপাচারযুক্ত এ সমাজে ইসলামী দাওয়াতই মানব সমাজের কাছে আশার আলো প্রজ্বলিত করতে পারে।
পৃথিবীকে সবার কাছে সুন্দর করতে আল্লাহ তায়ালা মানুষকে খিলাফতের দায়িত্ব অর্পণ করেছেন। এ দায়িত্ব সুন্দরভাবে পালনের জন্য মুসলিম উম্মাহর উপর দাওয়াতি ও তাবলিগের কাজ ফরজ করে দিয়েছেন। এ দায়িত্ব পালনে পবিত্র কোরআনে দায়ীদের উত্সাহিত করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তাঁর কথার চেয়ে কার কথা উত্তম হতে পারে, যে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেয়, সত্কর্ম করে এবং বলে আমি মুসলমানদের অন্তর্ভুক্ত’ (হা-মীম আস সাজদাহ : ৩)। আল্লাহ তায়ালা অন্যত্র বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে অবশ্যই এমন একটি দল থাকতে হবে, যারা মানব জাতিকে কল্যাণের দাওয়াত দেবে, সত্কাজের আদেশ করবে এবং অসত্কাজে নিষেধ করবে, তারাই সফলকাম’ (আলে ইমরান : ১০৪)।
দাওয়াতি কার্যক্রম একটি চলমান প্রক্রিয়া। এ প্রক্রিয়া থেকে বিরত থাকার কোনো সুযোগ মুসলিম উম্মাহর নেই। সব ধরনের অন্যায়-অবিচারে পৃথিবী যখন জর্জরিত তখনই অবিরাম দাওয়াতি কার্যক্রমই পারে বিপন্ন মানবতাকে মুক্তির সন্ধান দিতে। মানুষকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে দাওয়াতে বিকল্প কিছুই নেই। এ দাওয়াতের মাধ্যমে সমাজ-দেশ-জাতি-রাষ্ট্রের মধ্যে বসবাসকারী মানবতা মুক্তি ও কল্যাণ লাভ করতে পারে। এতে ছেদ পড়লে মানব সমাজ ধ্বংস হয়ে যাবে। মহানবীও (সা.) এ বিষয়ে সতর্কবাণী উচ্চারণ করে বলেন, আমি সেই সত্তার শপথ করে বলছি, যার হাতে রয়েছে আমার প্রাণ, অবশ্যই তোমরা সত্কাজের নির্দেশ দেবে এবং অসত্ কাজ থেকে মানুষকে বিরত রাখবে। নতুবা তোমাদের ওপর শীঘ্রই আল্লাহ শাস্তি অবতীর্ণ করবেন। তখন তোমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা জানাতে থাকবে কিন্তু তোমাদের প্রার্থনা কবুল করা হবে না। (তিরমিজি)
অতএব সামাজিক অশান্তি দূর করা ও মানবতার মুক্তির জন্য সবাইকে একযোগে দাওয়াতি কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে হবে। নিজেদের পরিশুদ্ধ হতে হবে এবং অন্যদের মাঝে চিন্তার পরিশুদ্ধি ঘটাতে হবে। তবে আমরা নতুন প্রজন্মের মাঝে একটি কল্যাণময় সমাজ উপহার দিতে সক্ষম হবো এবং পরকালে লাভ করতে পারব চূড়ান্ত সফলতা। ষ
লেখক : সহকারী অধ্যাপক, আরবি বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
ইসলামে দাওয়াতের গুরুত্ব্ব অপরিসীম। যে কারণে অসংখ্য নবী-রাসুল এ পৃথিবীতে আগমন করেছেন। ‘দাওয়াহ’ আরবি শব্দ। যার শাব্দিক অর্থ—আহ্বান করা, ডাকা। পরিভাষায় সব মানব সমাজকে ইহলৌকিক ও পারলৌকিক সুখ-শান্তি, কল্যাণ ও মুক্তি লাভের উদ্দেশ্যে পরিচালিত কার্যক্রমকে ইসলামে দাওয়াত হিসেবে গণ্য করা হয়। এ দাওয়াত মানুষকে অশান্তি থেকে শান্তির দিকে, অকল্যাণ থেকে কল্যাণের দিকে, সঙ্কীর্ণতা থেকে উদারতার দিকে, জাহান্নাম থেকে জান্নাতের দিকে এবং পশ্চাত্পদতা থেকে প্রগতির দিকে ধাবিত করে। আল্লাহর সঙ্গে মানব জাতির সম্পর্ক দৃঢ় করতে দাওয়াত সবচেয়ে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
ইসলামী দাওয়াতের কর্মসূচি আল্লাহর পক্ষ থেকে মানবজাতির জন্য এক বিরাট নিয়ামত। তিনি মানবজাতির মধ্য থেকে কিছু লোককে বাছাই করে দাওয়াতের জন্য মনোনীত করেছেন। তাদের আল্লাহ তায়ালা বিশেষ মর্যাদা দিয়েছেন। পৃথিবীর প্রথম মানব ও নবী হজরত আদম (আ.) এ দাওয়াতের কার্যক্রমের সূচনা করেন। পরবর্তী সময়ে হজরত নূহ, হুদ, সালিহ, ইয়াকুব ও ইউসুফ (আ.) থেকে হজরত ঈসা (আ.) পর্যন্ত অসংখ্য নবী-রাসুলের মাধ্যমে এ ধারা অব্যাহত রাখেন। তারা আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে আসা বাণীগুলো সর্বস্তরের মানুষের কাছে পৌঁছে দিতেন।
মহানবীর (সা.) দাওয়াত ছিল সার্বজনীন। পূর্ববতী নবী ও রাসুলরা বিশেষ কোনো গোত্র, গোষ্ঠী বা অঞ্চলের অধিবাসীকে দাওয়াত দিয়েছেন। ফলে তাদের দাওয়াত সার্বজনীনভাবে গ্রহণযোগ্য হয়নি। মহানবী (সা.) সব জাতি-গোষ্ঠীর কাছে আল্লাহ প্রদত্ত দাওয়াত দিয়েছেন। মহান আল্লাহ তায়ালা এ জন্যই তাকে ঘোষণা দেয়ার নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘আপনি বলুন, হে মানবমণ্ডলী! আমি তোমাদের সবার প্রতি আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত রাসুল’ (সূরা আল-আ’রাফ : ১৫৮)। তাঁর অবর্তমানে দাওয়াতের এ গুরুদায়িত্ব অর্পিত হয় মুসলিম উম্মাহর প্রতি। যারা কিয়ামত পর্যন্ত এ দায়িত্ব পালন অব্যাহত রাখবে।
সমাজের সব ধরনের অন্যায়, অবিচার, পাপাচার, মারামারি, দুর্নীতি, ব্যক্তি চরিত্র নষ্টসহ সব অপরাধ নির্মূলে ইসলামী দাওয়াত বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখে। কেননা, এ দাওয়াতের মূল বিষয়বস্তু হলো সত্ কাজের আদেশ এবং অসত্ কাজের নিষেধ। সেহেতু ব্যক্তি সব ধরনের অন্যায় কাজ থেকে বিরত থেকে সমাজে সুবিচার প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করবে। পাপাচারযুক্ত এ সমাজে ইসলামী দাওয়াতই মানব সমাজের কাছে আশার আলো প্রজ্বলিত করতে পারে।
পৃথিবীকে সবার কাছে সুন্দর করতে আল্লাহ তায়ালা মানুষকে খিলাফতের দায়িত্ব অর্পণ করেছেন। এ দায়িত্ব সুন্দরভাবে পালনের জন্য মুসলিম উম্মাহর উপর দাওয়াতি ও তাবলিগের কাজ ফরজ করে দিয়েছেন। এ দায়িত্ব পালনে পবিত্র কোরআনে দায়ীদের উত্সাহিত করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তাঁর কথার চেয়ে কার কথা উত্তম হতে পারে, যে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেয়, সত্কর্ম করে এবং বলে আমি মুসলমানদের অন্তর্ভুক্ত’ (হা-মীম আস সাজদাহ : ৩)। আল্লাহ তায়ালা অন্যত্র বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে অবশ্যই এমন একটি দল থাকতে হবে, যারা মানব জাতিকে কল্যাণের দাওয়াত দেবে, সত্কাজের আদেশ করবে এবং অসত্কাজে নিষেধ করবে, তারাই সফলকাম’ (আলে ইমরান : ১০৪)।
দাওয়াতি কার্যক্রম একটি চলমান প্রক্রিয়া। এ প্রক্রিয়া থেকে বিরত থাকার কোনো সুযোগ মুসলিম উম্মাহর নেই। সব ধরনের অন্যায়-অবিচারে পৃথিবী যখন জর্জরিত তখনই অবিরাম দাওয়াতি কার্যক্রমই পারে বিপন্ন মানবতাকে মুক্তির সন্ধান দিতে। মানুষকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে দাওয়াতে বিকল্প কিছুই নেই। এ দাওয়াতের মাধ্যমে সমাজ-দেশ-জাতি-রাষ্ট্রের মধ্যে বসবাসকারী মানবতা মুক্তি ও কল্যাণ লাভ করতে পারে। এতে ছেদ পড়লে মানব সমাজ ধ্বংস হয়ে যাবে। মহানবীও (সা.) এ বিষয়ে সতর্কবাণী উচ্চারণ করে বলেন, আমি সেই সত্তার শপথ করে বলছি, যার হাতে রয়েছে আমার প্রাণ, অবশ্যই তোমরা সত্কাজের নির্দেশ দেবে এবং অসত্ কাজ থেকে মানুষকে বিরত রাখবে। নতুবা তোমাদের ওপর শীঘ্রই আল্লাহ শাস্তি অবতীর্ণ করবেন। তখন তোমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা জানাতে থাকবে কিন্তু তোমাদের প্রার্থনা কবুল করা হবে না। (তিরমিজি)
অতএব সামাজিক অশান্তি দূর করা ও মানবতার মুক্তির জন্য সবাইকে একযোগে দাওয়াতি কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে হবে। নিজেদের পরিশুদ্ধ হতে হবে এবং অন্যদের মাঝে চিন্তার পরিশুদ্ধি ঘটাতে হবে। তবে আমরা নতুন প্রজন্মের মাঝে একটি কল্যাণময় সমাজ উপহার দিতে সক্ষম হবো এবং পরকালে লাভ করতে পারব চূড়ান্ত সফলতা। ষ
লেখক : সহকারী অধ্যাপক, আরবি বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
No comments:
Post a Comment